ইনভেশন থিউরি উদ্ভবের পেছনে মূল কারণ
পর্ব – ৩/৫ :
আর্যরা বহিরাগত এই তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভাবে ইউরোপীয় মস্তিষ্ক প্রসূত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত একথা হয়তো পাঠক শ্রেণী ইতোমধ্যেই আঁচ করতে পারছেন। প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার দর্শন, বিজ্ঞান, জ্যোতিবিজ্ঞান, স্থাপত্য বিজ্ঞান এতটাই উন্নত ছিল যে অষ্টাদশ শতাব্দীতেও ইউরোপীয় পণ্ডিতদের ভাবনার বাইরে ছিল তা। কিন্তু আত্ম অহংকারী শ্বেতাঙ্গরা মেনে নিতে পারেনি যে কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের থেকে উন্নত। তাই শুরু হলো ক্ষমতা ও বুদ্ধির অদ্ভুত নোংরা রাজনীতির খেলা।
বিখ্যাত French Philosopher Voltaire প্রায় ২০০ বছর আগে বলে গেছেন ❝ I am
convinced that everything has come down to us from the banks of the Ganges. Astronomy,
Astrology, Metempsychosis etc. . . It does not behove us, who were only savages
and barbarians when these Indian and Chinese peoples were civilized and learned,
to dispute their antiquity.❞
আর্যদের এই জন্য ইউরোপীয়দের মত দেখতে বলা হলো, সংস্কৃত ভাষার সাথে ইউরোপীয় ভাষার মিল দেখিয়ে ভারতীয়দের বোঝানো হলো যে বহু আগে আর্য এসেছিল আর অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ এসেছিল। দুজনেই একি রকম দেখতে, দুজনের ভাষার মূলও এক। সেদিন আর্যরা তাদের সাথে বেদ নিয়ে এসেছিল ও আদি ভারতীয়দের শিক্ষিত করেছিল একইভাবে ব্রিটিশও তাদের সাথে ইংরেজি শিক্ষা এনেছে যা ভারতীয় সেই সময়ের শিক্ষার থেকে গুণমানে অনেক উন্নত।
এর সাথে সূক্ষ্ম ভাবে বিভাজনের নীতিও চালু হলো। উত্তর ভারতীয়দের সাদা আর্যদের বংশধর ও কালো দক্ষিণ ভারতীয়দের আদি ভারতীয় বলা হলো। ভারতীয় জাতিকে আর্য ও দ্রাবিড়, দুই ভাগে ভাগ করে দিলো। কোনো নৃতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব প্রমাণ দেওয়া হলো না। চমৎকার ভাবে অবিশ্বাস ও ঘৃণার বীজ বোনা হলো, যা এখনও বর্তমান।
তখন নতুনভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠা হলো। ভারতীয় প্রথাগত শিক্ষা উঠিয়ে ব্রিটিশ শিক্ষা পদ্ধতি শুরু হলো। এই সব শিক্ষা পদ্ধতি মূলত মিশনারী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হলো। সনাতন ধর্মের কোনো ভাল দিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে তুলে ধরা হলো না। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সনাতন ধর্ম, এটাই প্রচার হলো। ঠিক এই সময় ইউরোপীয়রা বেদ, মনুসংহিতার অনুবাদ করলো। সেখানেও অনেক অসত্য ও ভুল ব্যাখ্যা হলো। শিক্ষিত সমাজ ধীরে ধীরে সনাতন ধর্মের প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে গেলো। দেখা গেলো স্বামী বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ এবং হাতে গোনা কিছু মনীষী ব্যতীন অন্য কেউ সনাতন ধর্মের হয়ে কথা বললেন না। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস হারিয়ে গেলো।
এদিকে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ও দক্ষিণ ভারতে শুরু হলো অন্য খেলা। আর্যদের জন্য যে তারা তাদের বাসস্থান হারিয়েছে, সেটা মগজ ধোলাই করে ঢোকানো হলো। শুরু হলো একদলের পরম ছায়ায় ধর্মান্তরকরণের মহাউৎসব।
